Showing posts with label slovenia. Show all posts
Showing posts with label slovenia. Show all posts

Wednesday, December 18, 2019

ল্যুবলীয়ানা - ছুটির ফাঁকে , রূপকথার দেশে (holiday in the off-route- Ljubljana)

ল্যুবলীয়ানা 


বেশ কিছু বছর আগে ড্রাগন নিয়ে পড়তে পড়তে 
হঠাৎ করেই স্লোভেনিয়ার রাজধানী ল্যুবলীয়ানার 
কথা জানতে পারি . একটাছোট্ট পাহাড়ি শহর যার সাথে  জড়িয়ে অদ্ভুত এক ড্রাগন myth . 

ডিসেম্বর এর ইউরোপ একটু কম ভিড়,  শুধুমাত্র খ্রীষ্টমাস প্রেমী মানুষদের বাদ দিলে .  ল্যুবলীয়ানার প্ল্যান রেডি করে রেখেছিলাম বেশ কিছু মাস আগেই থাকতেই এবং কোনোকারণ ছাড়াই . 

কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই আমার বেটার হাফ এবং "ট্রাভেল পার্টনার" তার জন্মদিন এর জন্য 4-5দিন ছুটি পাবে বলতেই মাথায় এলো ড্রাগণ ও গুহার দেশ স্লোভেনিয়া. 2018 তে প্ল্যান বানিয়েও কোথাও যেতে পারিনি তার জন্মদিনে তাই এবারে ভালো করে জেনে নিলাম যে সত্যি ছুটি পাবে কিনা . সবুজ আলো দেখা মাত্র, পুরোনো নোটস থেকে স্লোভেনিয়া প্ল্যান বেরিয়ে এলো . 




রাত  5 দিন স্লোভেনিয়া তে কাটিয়ে আপাতত সুন্দর ছোট্ট 

দেশটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি .




প্রথম দিন - ল্যুবলীয়ানা 





মিউনিখ থেকে flixbus ল্যুবলীয়ানা পৌঁছাতে দুপুরতাড়াতাড়ি সূর্যাস্ত এদিকে তাই সেদিন এখানকার 
খ্রীষ্টমাস মার্কেটআর ওল্ড টাউন
সিটি সেন্টার ঘুরে বেড়ানোর প্ল্যান ছিল . 



আমরা ছিলাম airbnb তে , যার 

লোকেশন ড্রাগন ব্রিজ থেকে মাত্র 200 মিটার .

হ্যাঁ , ড্রাগন ব্রিজআর এখান থেকেই শুরু আমার উৎসাহের . ছোট থেকেই আমার মনেপ্রাণে বিশ্বাস যে ড্রাগন একদিন ছিল এই দুনিয়ায়  আর 
ল্যুবলীয়ানার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে ড্রাগন . কিভাবে গ্রীক বীর জেসন এক ড্রাগন কে মেরে ল্যুবলীয়ানা স্থাপন 
করেছিলেন সেই গল্প পরে মনে হয়েছিল এই শহরে একবার আমায়  যেতেই হবে , সেই 
ইচ্ছেপূরণহলো এবার . 

উপরি পাওনা এখানকার ক্রিস্টমাস মার্কেট ,যেটি আসলে পুরো শহর জুড়ে হয় এখানে আলোর বাহারে চোখ আর মন ভোরে গেছে রোজ নতুন করে.


দ্বিতীয় দিন - লেক ব্লেড এবং লেক বোহিন 


ল্যুবলীয়ানা থেকে সকাল 9টার বাসে দ্বিতীয় দিনের প্রথম গন্তব্য ছিল 
হিমবাহ থেকে সৃষ্ট লেক ব্লেড . শুধুমাত্র 
স্লোভেনিয়া নয় পুরো দুনিয়ার অন্যতম সুন্দর এক লেক এই লেক ব্লেডঅপরূপ সুন্দর এই লেক  সোশ্যাল মিডিয়া তে দেখেছি এতদিন , এবার সামনে থেকে দেখে আরোই মুগ্ধ হয়েগেলাম . কাঁচের মতো জল আর ছবির মতো জায়গা . 











কবিদের দুলাইন লিখে ফেলার মতো লেক  ব্লেড আবার দেখার ইচ্ছে নিয়ে আমাদের   পরবর্তী গন্তব্য লেক বোহিন .  তবে  ইংরেজি বানান দেখলে বহিঞ্জ  বলা যায় বোধহয়. 



লেক বহিন স্লোভেনিয়ার সবচেয়ে 
বড় হিমবাহসৃষ্ট লেকযখন পৌঁছেছি তখন ঘড়ির কাটা বেশি এগোয়নি 
তবে আকাশে মেঘজমতে শুরু 
হয়েছে . এমন শান্ত জায়গা আমি 
বিশেষ দেখিনি . লেক বোহিন ঘুরে যখন  
ল্যুবলীয়ানা এলাম,  তখন বিকেল 5টা  হলেও অন্ধকার নেমে  এসেছেজ্বলে উঠেছে 
ল্যুবলীয়ানার খ্রীষ্টমাস এর আলো .






তৃতীয় দিন - পোস্টয়না গুহা , প্রেডিয়ামা প্রাসাদ 


কিছু কিছু জায়গা এমন হয় যেখানে গিয়ে বর্ননা দেয়ার ভাষা 
থাকেনা . পোস্টয়না গুহা সেরকমই 
এক জায়গা . এই মায়াবী গুহাপ্রায় 30 মিলিয়ন বছর পুরোনো . অস্ট্রিয়ার এক ডিউক 1819 সালে এই  গুহার প্রথম "অফিসিয়াল ভিসিটর". তারপর থেকে এই  গুহা জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হইছে . টয় ট্রেন এর মতো ছোট  ট্রেন  করে ভিতরে প্রবেশ করানো হয় এবং সবচেয়ে গভীরযে পয়েন্ট তার  কাছাকাছি  প্লাটফর্ম  নামানো হয়যে ভাষার  গাইড নেয়া হয়সে ওখান থেকে শুরু করে বর্ণনা.



এই গুহার ভিতরে স্ট্যালাকটাইট এবং  স্টেলাগমাইট এর আকার , আকৃতি  উচ্চতা দেখে তাক লেগে যায় . ভিতরে ক্যালসিয়ামকার্বন , ম্যাঙ্গানিজের আধিক্যের ওপর ভিত্তি করে আছে সাদা , 
কালো , লাল রঙের বাহার . ভিতরে আছে স্পাঘেটি গুহা যেখানে স্ট্যালাকটাইট এর আকার একেবারে স্পাঘেটির মতো .

একটি ব্রিজ আছে যা পুরোনো গুহা কে নতুন গুহার সাথে সংযোগ করে . সেই ব্রিজ এর নাম রাশিয়ান ব্রিজ. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলা কালীন রাশিয়ান বন্দিদের দিয়ে বানানোহয়ে ছিল এই ব্রিজ .  
মানুষ প্রবেশ করতে পারে  150 মিটার অবধি.  





24 কিলোমিটার দীর্ঘ এই গুহার ভিতর 
তাপমাত্রা সবসময় 10ডিগ্রী . বেশ কিছু গুহাবাসী  প্রাণীর বসবাস এখানে এবং তাদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত "human fish "  যেটা পরিচিত "baby dragon "   নামে . অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতাএই পোষ্টইনা গুহাযার পরতে পরতে লুকিয়ে এক  অন্য জগৎ .

পোষ্টইনা গুহা থেকে 9-10 কিলোমিটার দূরে প্রেডিয়ামা প্রাসাদ . 
ডিসেম্বরে পর্যটকদের সংখ্যা কম থাকায় shuttle ট্যাক্সি বন্দোবস্তকরে দেয় পোষ্টইনা গুহা  অফিস থেকে . 

                                                                           প্রেডিয়ামা প্রাসাদ পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ "cave castle ".

জনপ্রিয় টেলিভশন শো গেম অফ থ্রোন্স এর উইন্টারফেল প্রাসাদ এর সাথে বেয়াহ কিছু মিল পেলাম এই প্রেডিয়ামা প্রাসাদের . প্রাসাদটির বেশ খানিকটা  অংশ ধ্বংস হয়েগেছে .তবুও অবশিষ্ট অংশ কোনো ভাবে কম আকর্ষণীয় নয়বিশেষ দ্রষ্টব্য torture room.

বছর কয়েক আগে ডিসকভারি চ্যানেল একটি ডকুমেন্টারী 
বানাতে এই প্রাসাদে এসেছিলো .  শোনা যায় , নানারকম শব্দ 
এবং অশরীরী অনুভূতি হইছিলো তাদের অনেকের . কিছুক্ষন 
ওইঘরে দাঁড়িয়ে থাকলে শুধুমাত্র অন্ধকার এবং ইতিহাসের 
কারণে একটু গা ছমছম করে বইকি . প্রেডিয়ামা প্রাসাদে শেষ আক্রমণকালে সমস্ত গয়না এবং ধন লুকিয়ে রাখা হয়েছিল  
প্রাসাদের ভূগর্বস্থ কুঠরি তে . নিঃসন্দেহে ভালো সিদ্ধান্ত ছিল 
কারণ 90 এর  দশকে সেসব খুঁজে পাওয়া যায় যখন  পুরাতত্ত্ব বিদেরা কাজ করছিলেন এই প্রাসাদে .

প্রেডিয়ামা প্রাসাদ থেকে আবার ফিরতে হলো পোষ্টইনা গুহা তে  কারণ আমাদের ফেরার বাস ছিল সেখান থেকে.ফেরার পথেখেলাম স্লোভেনিয়ার বিখ্যাত গিবানিকা কেক .ফিরে এসে আবার 
ল্যুবলীয়ানার ক্রিস্টমাস মার্কেট এবং সেখানে গিয়ে গরম ওয়াইন .




চতুর্থ দিন - মধ্য যুগীয় গ্রাম স্কফিয়া লোকা 


এই দিন বেশি কিছু প্ল্যান ছিলোনা তাই দিন শুরু করলাম একটু আস্তেসুস্থেতারপর 9:30এর বাস ধরে গন্তব্য স্কফিয়া লোকা গ্রাম . 
পুরো গ্রামটি  Unesco heritage 

এখানে হাঁটার সময়ে মনে হয় ক্যানভাসে 

আঁকা কোনো জায়গা দিয়ে চলেছি . 
ছোটবেলায় আমায় মা  বলতেন ছবি আঁকতে গেলে ভালো কল্পনা শক্তির প্রয়োজন
স্কফিয়া  লোকার গলি তে হাঁটতে হাঁটতে মনেহলো ছোটবেলায় এমন জায়গা দেখলে 
কল্পনা শক্তিতে ওতো তীব্র চাপ  দিতে হতোনা . 





প্রসঙ্গতস্লোভেনিয়ার সবথেকে পুরোনো ব্রিজ কাপ্পুচিন ব্রিজ এই স্কফিয়া লোকাতেই অবস্থিত , সেলকা সরা নদীর ওপর . 


















পরের দিন ফিরে আসা মিউনিখ . তবে ফেরার পথে জুলিয়ান আল্পসের ওপর সূর্যাস্তের মায়াবী আলো দেখতে দেখতে নিজের মনে বললাম,  আবার দেখা হবে , স্লোভেনিয়া .